সুদ ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে চারঘাটের সাধারন মানুষ

সুদ ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে চারঘাটের সাধারন মানুষ

সুদ ব্যবসায়ীদের
প্রতীকি ছবি

মোঃশিমুল ইসলাম : সুদ কিংবা মহাজনী ব্যবসা সামাজিক নীপিড়নমুলক একটি অনৈতিক পন্থা। বহু পূর্ব হতে বিষ বৃক্ষের ন্যায় এই ব্যবস্থা শোষণের একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত। বর্তমানে চারঘাটের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে এই কারবার।

মহাজনদের কঠিন শর্তের বেড়াঁজালে আটকে সর্বস্ব খোয়াচ্ছে তারা। পক্ষান্তরে টাকা দিয়ে টাকা বানিয়ে পুঁজিপতি শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত হয়েও কৌশলে আয়কর বিভাগের নজরদারি এড়িয়ে দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছে এসব সুদখোররা। আইন সম্মত বা বৈধ না হওয়া সত্ত্বেও এই ব্যবসার সাথে জড়িতদের নানা কুট কৌশলের কারনে সমাজের কোন পর্যায় থেকে এর বিরুদ্ধে “টু” শব্দটি পর্যন্ত করা হচ্ছে না। কিন্তু দিনে দিনে এর ক্ষতিকর প্রভাবের কারনে চারঘাটের সাধারন মানুষ যারপর নাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

যুগপোযোগী আইন করে এই প্রবনতা বন্ধ করা না গেলে নিকট ভবিষ্যতে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নৈরাজ্য দেখা দেবে। যা উপজেলার শ্রেনী বৈষম্যকে প্রকট করে তুলে চরম সামাজিক অস্থিতরতা সৃষ্টি করতে পারে। যেখানে বর্তমানে ব্যাংক এ সুদের হার ৫%-৭% করে সেখানে এই সব সুদের ব্যবসাকারীরা ১২০%, বা কোন কোন ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশী হারে সুদ নিচ্ছে। তাদের এই অতি সুদের লোভের কারনে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে বহু লোক। কেউ সুদ না দিতে পেরে পালিয়ে বেরাচ্ছে। কেউ বা হয়ে যাচ্ছে মাদকাসক্ত।

অন্যদিকে সুদের টাকা জোগাড় করতে কেউ জড়িয়ে পড়ছে নানান অপরাধ মূলক কাজে। সমস্ত চারঘাট উপজেলা জুড়েই সুদের ব্যাবসা ছড়িয়ে পড়েছে।এদের তালিকায় উঠে এসেছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে মুচি পর্যন্ত নাম।

সুদ ব্যাবসায়ীদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি উপজেলা কাঁকরামারী বাজারে।এখানে দিন- রাত প্রকাশ্যে সুদের টাকা নিয়ে দেন দরবার হয়। এছাড়াও চারঘাট সদর,সিনেমা হল মোড়,পরানপুর বাজার,বাঁকড়া,ইউসুফপুর,মালেকার মোড়সহ বিভিন্ন বাজারে সুদের ব্যাবসা জমজমাট।অনেক বাসাবাড়ির গৃহিনীরাও অধিক লোভের আশায় এই ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

যারা সুদের ব্যবসা করছেন তারা এলাকার কিছু বখাটে ছেলেদের প্রশয় দিয়ে কিশোর গ্যাং কালচার তৈরি করছে।এসব গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের সবসময় নিজেদের সাথে রাখছে।তাদের মাধ্যমে সুদের টাকা পরিশোধ না করতে না পরালে মোবাইলে হুমকিসহ নানা ভয়-ভিতি দেখাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে কেউ পালিয়ে বেরাচ্ছেন কেউ বা তার আত্মীয়-স্বজন বা অন্য লোকদের কাছ থেকে আরো চড়া সুদে টাকা এনে ঋন পরিশোধ করছেন। কেউ বা বিক্রী করছেন স্ত্রীর গহনা। ফলে এই সকল ঋণগ্রস্থ লোকেরা আর কখনো ঋণমুক্ত হতে পারছেনা।

এ ব্যাপারে চারঘাট সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন,মধ্যযুগ কিংবা সামন্তযুগ,সব সময়েই মহাজনী ব্যবসা বেশ জোরেশোরে চলছিল। কিন্তু সভ্যতার ক্রম বিকাশের যুগে এসে ঐ প্রবণতার পথ রুদ্ধ হলেও অতি সম্প্রতি চারঘাটে মহাজনী ব্যবসা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আর মহাজনদের চড়াসুদের গ্যাড়াকলে পড়ে সাধারন মানুষ থেকে উচ্চবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত সকলেই দেরবার হয়ে যাচ্ছে।এ ব্যাপারে খুব দ্রুত প্রশাসনের কার্যকারী ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, সুদ ব্যাবসা অবশ্যই সমাজের জন্য ক্ষতিকর।আমাদের কাছে এরকম ভুক্তভোগী কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করবো।আর ভবিষৎ এ অনুসন্ধান করে এসব ব্যাবসার সাথে জড়িতদের তালিকা তৈরি করা হবে বলে জানান তিনি।

মতিহার বার্তা ডট কম – ১০ অক্টোবর ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply